বাংলাদেশ ক্রিকেটে কোচদের বিদায় খুব একটা সুখকর হয় না। ৯৯’র ইংল্যান্ড বিশ্বকাপে পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচ শুরুর আগে কোচ গর্ডন গ্রিনিজের হাতে ছাড়পত্র ধরিয়ে দেওয়া হয়। তার শিষ্যরা মাঠে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন, আর গুরু সে সময়ে ব্যাগ গোছাচ্ছিলেন।
২০ বছর পর সেই ইংল্যান্ড বিশ্বকাপে যাত্রা থেমে যায় আরেক কোচ স্টিভ রোডসের। অবশ্য তিনি দলের সঙ্গে ফিরেছিলেন দেশে। ফিরে নিজের বিশ্বকাপ রিপোর্ট জমা দিতে পারেননি। তার আগেই বিসিবি কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে বসতে হয় নিজের ভবিষ্যৎ নির্ধারণে। পারস্পরিক সমাঝোতায় সিদ্ধান্ত হয়, রোডস বিদায় নিচ্ছেন। চুক্তি অনুযায়ী তিন মাসের পূর্ণ বেতন নিয়ে বাংলাদেশ ছাড়েন।
পরিসংখ্যানের বিচারে রোডসের সাফল্যের হার ৬০ শতাংশ। তিনি দায়িত্ব নেওয়ার পর ৩০ ওয়ানডে খেলে বাংলাদেশ জিতেছে ১৭টি। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে জিতেছিল টেস্ট সিরিজও। জেতে প্রথমবারের মতো ত্রিদেশীয় টুর্নামেন্টও। পারফরম্যান্স মূল্যায়নে রোডস ভালো করেছেন। কিন্তু বিশ্বকাপ ব্যর্থতায় বিদায় নিতে হয় তাকে।
দীর্ঘদিন পর রোডসকে নিয়ে আলোচনার বড় কারণ, আবার দেশের ক্রিকেটে ফিরেছেন তিনি। বিপিএলে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের পরামর্শক হয়েছেন। দুই বছরেরও বেশি সময় হয়েছে বাংলাদেশের ক্রিকেটের সঙ্গে নেই তিনি। তবে দলের খোঁজখবর বেশ ভালো রেখেছেন। আজ গণমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে সেই কথাই বললেন, ‘এটা হয়তো একটু অন্যরকম শোনাবে, কিন্তু আমি বাংলাদেশ ক্রিকেট খুব-খুব মনযোগের সঙ্গে অনুসরণ করেছি। আমি বাংলাদেশে আমার সময়টা খুব উপভোগ করেছি। সামনের পাঁচটি সপ্তাহ কুমিল্লার সঙ্গে থাকব। হ্যাঁ, সত্যি আমি বাংলাদেশ ক্রিকেটে কী হচ্ছে, আপনারা বাংলাদেশ ক্রিকেট নিয়ে কিসের ভেতর দিয়ে গিয়েছেন সবই অনুসরণ করেছি।’
বাংলাদেশে ফিরে এসে দারুণ খুশি রোডস। সোমবার অনুশীলনের ফাঁকে মাশরাফি, মাহমুদউল্লাহ ও সাকিবের সঙ্গে আলাপ করেছেন। এছাড়া পুরোনো আরো কয়েকজন শিষ্যের সঙ্গেও কথা হয়েছে তার। সেসব নিয়ে তিনি বলেছেন, ‘ফিরে এসে খুব ভালো লাগছে। এখানে আসার পর কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স আমাকে যেভাবে অভ্যর্থনা জানিয়েছে তা সত্যিই বিশেষ কিছু। যেখানেই যাই না কেন, বাংলাদেশে পা রাখার পর সবসময়ই ভালো লাগে। এখানকার মানুষ বেশ আন্তরিক ও বন্ধুত্বপূর্ণ। এখানে ফিরে এসে সম্মানিতবোধ করছি। আশেপাশে বেশ ভালো মানুষ আছে, যে জায়গায় আমি খুব উপভোগ করি।’
জাতীয় দলের দুই তারকা মাশরাফি মুর্তজা ও মাহমুদউল্লাহর সঙ্গে দারুণ সময় কেটেছে তার, ‘মাশরাফি ও মাহমুদউল্লাহর সঙ্গে কথা বলে ভালো লেগেছে। একেবারেই বন্ধুত্বপূর্ণ আলাপ। দুজনের সঙ্গে দেখা হয়েছে। আমার অনেক ক্রিকেটারের সঙ্গেই ব্যক্তিগত যোগাযোগ রয়েছে। তাদের সঙ্গে কথা বলার কোনো ইস্যু কিংবা নাটক ছিল না। আবারো তাদের দুজনকে একসঙ্গে পেয়ে ভালো লেগেছে।’
তবে নিজের বিদায় ও বিসিবির সেই সিদ্ধান্তগুলো নিয়ে কথা বলতে নারাজ তিনি। রোডস জানালেন, বাংলাদেশ এগিয়ে গেলেই তৃপ্তি পাবেন তিনি, ‘আমি আসলে বিসিবি বা অন্য কিছু নিয়ে কোনো কথোপকথন টেনে আনতে চাই না। আমি মনে করি না যে এটি ন্যায্য হবে। ওটা অতীত। আমি এটুকুই বলতে চাই যে বিশ্বকাপের ম্যাচগুলোয় যদি আপনি দেখেন, শুধু পাকিস্তান ম্যাচ বাদে বাকি সব ম্যাচেই আমরা দারুণ খেলেছিলাম। এমনকি ইংল্যান্ড ও ভারতের কাছে হারের ম্যাচগুলোতেও। তাতে বাংলাদেশের ক্রিকেট ধ্বংস হয়ে যায়নি।‘
রোডস আরো বলেন, ‘বিশ্বকাপের আগে পরে আমরা খুবই ভালো ক্রিকেট খেলেছি। আমরা কিছু ভালো জয়ও পেয়েছিলাম। নিউ জিল্যান্ডে ও বিশ্বকাপে ভালো করেছিলাম। তাই মানুষ যতটা খারাপ মনে করে, আমি মনে করি না ওতটা খারাপ ছিল।’
সবকিছু ভুলে বাংলাদেশে সময়টা উপভোগ করতে চান সাবেক কোচ, ‘যে কোনো চাকরি বা কোনো পোস্ট থেকে বিদায়ের ব্যাপারে মানুষের মতামত থাকবে স্বাভাবিক। কিন্তু আমি আসলে এতে খুব বেশি জড়িত হতে চাই না। আমি শুধু বলতে পারি বাংলাদেশে জনগণের মধ্যে ফিরে আসতে পেরে আমি কতটা খুশি।’
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।